ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিপদের সামনে টিকে থাকার লড়াই

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ

ইমরান হোসেন

প্রকাশিত: ০১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:১০ রাত

জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কেবল ভবিষ্যতের হুমকি নয়, এটি বর্তমান বাস্তবতা। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য, যেখানে ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো জলবায়ু সংকটকে আরও গভীর করেছে। এ দেশের কোটি কোটি মানুষ আজ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে—কখনও খরায়, কখনও বন্যায়, আবার কখনও ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে। প্রশ্ন উঠছে—এই সংকটের মুখে কীভাবে টিকে থাকবে বাংলাদেশ?


? বাংলাদেশ কেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও নিচু ভূখণ্ডের একটি দেশ। ভারতের হিমালয় থেকে নেমে আসা শত শত নদী এই দেশজুড়ে প্রবাহিত, যা বর্ষাকালে প্লাবনের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা ও ঘনত্বও বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রায় শূন্য, কিন্তু ভুক্তভোগীর তালিকায় আমরা একদম ওপরে!


⚠️ ৫টি বড় জলবায়ু হুমকি বাংলাদেশে

১. উপকূলীয় লবণাক্ততা বৃদ্ধি

খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ভোলা—এইসব উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে লবণাক্ততা ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে কৃষিকাজ নষ্ট হচ্ছে, মিঠা পানির সংকট তৈরি হচ্ছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

২. ঘূর্ণিঝড়ের ঘনত্ব ও ভয়াবহতা

সিডর, আইলা, বুলবুল—এইসব দুর্যোগ এখন আর বিরল নয়। ২০০৭ সালের সিডর প্রায় ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছিল। এমন ঘূর্ণিঝড় প্রতি দুই–তিন বছর পরপর আসছে, এবং প্রতিবারই লাখ লাখ মানুষকে পুনর্বাসনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

৩. জলবায়ু উদ্বাস্তু

২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর গড়ে ৭ লাখ মানুষ জলবায়ু কারণে নিজের বাড়িঘর হারাচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২ কোটি! ঢাকার মতো শহরে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের চাপ বাড়ছে।

৪. কৃষিতে উৎপাদন হ্রাস

জলবায়ুর পরিবর্তনে কৃষির ক্যালেন্ডার উলটে গেছে। আগাম বৃষ্টি, দেরিতে শীত, খরার প্রকোপ—সব মিলিয়ে ধান, গম, ভুট্টার উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কৃষকরা আগের মতো উৎপাদন করতে পারছে না, ফলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে।

৫. শহুরে জলাবদ্ধতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি

ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে প্রতিটি বর্ষায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয় জীবাণুবাহী পানি ও রোগের বিস্তার। অপরদিকে, কংক্রিটের শহরে তাপমাত্রা প্রতি বছর গড়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ছে।


? সমাধান কোথায়?

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করেছে। তবে শুধু পরিকল্পনা নয়, চাই বাস্তবায়ন ও জনগণের অংশগ্রহণ। নিচে কয়েকটি করণীয় তুলে ধরা হলো—

  • পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার

  • সবুজ অবকাঠামো তৈরি

  • উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র বাড়ানো

  • পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি চালু

  • সাধারণ জনগণের জলবায়ু শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি


? উপসংহার

জলবায়ু পরিবর্তন কোনো ভবিষ্যতের সম্ভাব্য হুমকি নয়—এটি এখনই আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের সমন্বিত উদ্যোগ। বাংলাদেশ যদি আজই প্রস্তুত না হয়, তাহলে আগামীকাল আর প্রস্তুত হওয়ার সময় নাও থাকতে পারে।

Link copied!